নাইট টেরর (Night Terror) – শিশুদের ঘুমের অস্বাভাবিকতা

নাইট টেরর কি?
নাইট টেরর হলো শিশুর ঘুমের মধ্যে একটি ভয়ঙ্কর ঘটনা। এই সময় শিশুটি হঠাৎ ভয়ে চিৎকার, ঘন কাঁপুনি, অস্থিরতা বা কান্না করতে পারে। অনেক সময় শিশুটি ঘুমের মধ্যে চোখ খুললেও বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে সে পুরোপুরি জাগ্রত থাকে না এবং পরে এই ঘটনার কথা মনে করতে পারে না। নাইট টেরর সাধারণত নন-র্যাপিড আই মুভমেন্ট (NREM) ঘুমের সময় ঘটে, যা ঘুমের প্রথম তিন ঘণ্টার মধ্যে বেশি দেখা যায়।
নাইট টেররের লক্ষণসমূহ
শিশুদের নাইট টেররের প্রধান লক্ষণগুলো হলো:
- হঠাৎ জেগে উঠে চিৎকার বা কাঁদা
- ঘন ঘন নিঃশ্বাস বা দ্রুত হৃদস্পন্দন
- হাত-পা কাঁপানো, ঘাড় বা শরীর অস্থিরভাবে নড়াচড়া
- চোখ খোলা, কিন্তু পরিবেশ সম্পর্কে অচেতন থাকা
- ঘটনার পর শিশুর স্মৃতিশক্তি শূন্য বা খুবই কম
নাইট টেররের কারণ
নাইট টেরর হওয়ার জন্য সরাসরি কোনো রোগ দায়ী না হলেও কিছু কারণের সাথে এটি যুক্ত হতে পারে:
- ঘুমের পর্যায়ের অমিল – শিশুর গভীর NREM ঘুম ঠিকমত সম্পন্ন না হলে নাইট টেরর হতে পারে।
- ঘুমের ঘাটতি – অপর্যাপ্ত ঘুম বা অনিয়মিত ঘুমের সময় শিশুদের নাইট টেররের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- মানসিক চাপ বা উদ্বেগ – শিশু মানসিকভাবে চাপগ্রস্ত হলে ঘুমের অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।
- অতিরিক্ত ক্লান্তি ভাব এবং ঘুমের ঘাটতিঃ অনেক শিশুর ক্ষেত্রে দুপুরে ঘুমের অভাব এবং অতিরিক্ত ক্লান্ত ভাব নাইট টেররের কারণ হতে পারে।
- জ্বর বা অসুস্থতা – অনেক সময় উচ্চ জ্বর বা শারীরিক অসুস্থতার কারণে নাইট টেরর দেখা দিতে পারে।
- পরিবারে ইতিহাস – পারিবারিক ইতিহাসে নাইট টেরর থাকলে শিশুর মধ্যে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
- অতিরিক্ত উদ্দীপনা – ঘুমের আগে অতিরিক্ত খেলা, টেলিভিশন, মোবাইল বা গেম খেলায় শিশুর মস্তিষ্ক অতিসক্রিয় হলে।
কোন বয়সী শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়?
নাইট টেরর সাধারণত ২–৭ বছর বয়সের শিশুর মধ্যে বেশি দেখা যায়
- শিশু বড় হতে থাকলে ঘুমের নিয়মিত ধারা স্থিতিশীল হওয়ায় নাইট টেররের প্রকোপ স্বাভাবিকভাবে কমে যায়।
- প্রি-স্কুল ও প্রাথমিক স্কুলের শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
নাইট টেরর প্রতিরোধের উপায়
নাইট টেরর পুরোপুরি প্রতিরোধ করা কঠিন, তবে কিছু নিয়মিত অভ্যাস এবং যত্নের মাধ্যমে ঘটনার সংখ্যা কমানো যায়:
- নিয়মিত ঘুমের রুটিন তৈরি করা: প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানো এবং জাগ্রত হওয়া। দুপুরে ও রাতে পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা (বয়স অনুযায়ী)
- ঘুমের আগে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ: হঠাৎ শব্দ বা উজ্জ্বল আলো কমানো; ঘুমের আগে গল্প বলা বা হালকা গান শোনা
- শারীরিক ও মানসিক চাপ কমানো: শিশুদের অতিরিক্ত উদ্বেগজনক কার্যক্রম থেকে দূরে রাখা। দিনে পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও খেলার সুযোগ দেওয়া।
- রাত্রে ঘুমের কিছুক্ষণ আগে ভারী খাবার এড়ানো: অনেক সময় ঘুমের আগে মিষ্টি বা কফি জাতীয় খাবার শিশুদের অতিসক্রিয় করতে পারে
- সেফ স্লিপিং এ্যারিয়া নিশ্চিত করা: শিশুর ঘুমানোর জায়গা নিরাপদ রাখা, যাতে হঠাৎ আচরণে আঘাত না লাগে
মনে রাখতে হবে, নাইট টেরর স্বাভাবিকভাবে চিকিৎসা ছাড়া অনেক সময় নিজে চলে যায়। তবে যদি এর মাত্রা অত্যাধিক হয়, ঘুমে আঘাত ঘটে বা শিশু গুরুতর অস্থির হয়, তাহলে শিশুকে শিশু বিশেষজ্ঞ দেখানো উচিত।
নাইট টেররের বাইরে অন্য কারণে ঘুমের মধ্যে শিশুর কান্না
- কোলিক বা পেট ব্যথা – বিশেষত ০–৪ মাসের শিশুদের মধ্যে দেখা যায়।
- অসুস্থতা – শিশুর শারীরিক অসুস্থতার কারণে
- ডেন্টিশন (দাঁত ওঠা) – দাঁত ওঠার সময় শিশুর ঘুম ভাঙতে পারে
- নিঃসঙ্গতা বা নিরাপত্তার অভাব – শিশুর মায়ের বা পরিচর্যাকারীর উপস্থিতি না থাকলে
- ঘুমের অস্বস্তি – গরম, ঠান্ডা, ভিজে ডায়াপার বা অস্বস্তিকর পোশাক
- রিম (REM) ঘুমের স্বাভাবিক স্বপ্ন – কখনও কখনও শিশুর স্বপ্নের কারণে হঠাৎ কান্না বা চিৎকার দেখা যায়ত
নাইট টেরর শিশুদের ঘুমের অস্বাভাবিকতা। যদিও এটি প্রায়শই আতঙ্কজনক মনে হতে পারে, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটি সুরক্ষিত এবং স্বাভাবিকভাবে কমে যায় বয়স বাড়ার সঙ্গে। নিয়মিত ঘুমের রুটিন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং শিশুর মানসিক ও শারীরিক যত্নের মাধ্যমে এর প্রাবল্য কমানো সম্ভব। তবে গুরুতর বা বারবারের ঘটনার ক্ষেত্রে পেশাদার সাহায্য নেওয়া উচিত।
© Dr-Adnan Al Berunie
MBBS, MS (Pediatric Surgery)
SCHP (Paediatrics) Australia, CCD
Child Specialist & Pediatric Surgeon
চেম্বারঃ
আল-মারকাজুল ইসলামী হাসপাতাল
২১/১৭, বাবর রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
রবি, মংগল ও বৃহ, বিকেল ৫ঃ০০ – ৭ঃ০০
সিরিয়ালের জন্য কল করুনঃ 01755515556
ইউনিএইড ডায়াগনস্টিক এন্ড কনসালটেশন
2-A/1, দারুস সালাম রোড, মিরপুর-১।
শনি, সোম ও বুধবার, সন্ধা ৭ঃ৩০ – ৯ঃ৩০
সিরিয়ালের জন্য কল করুনঃ 01333702755
অনলাইন কনসালটেশনঃ m.me/cdc.dhaka.bd
Share via: